Sunday, May 23, 2010

জামায়াত গণতান্ত্রিক সংগঠন\ কোন দুর্বলতা নিয়ে রাজনীতি করে না

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের অন্যতম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী সরকার জনগণকে যে ওয়াদা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তা রক্ষা করেনি। ক্ষমতায় গেলে ইসলাম বিরোধী কোন কর্মকান্ড করবে না বলে ওয়াদা দিলেও বর্তমানে সরকার ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাই এ সরকারের মানবতা ও ইসলাম বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তিনি গত শুক্রবার জামায়াতে ইসলামী দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। উপজেলা আমীর মাষ্টার আব্দুল কুদ্দুছের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি শাবিবর আহমদের পরিচালনায় কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অন্যতম সদস্য ও সিলেট জেলা (দক্ষিণ) আমীর জননেতা মাওলানা হাবীবুর রহমান, নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, সেক্রেটারি মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা ফারুক আহমদ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ।
প্রধান অতিথি বর্তমান সরকারের দেশ বিরোধী কর্মকান্ডের সমালোচনা করে বলেন, সরকার দেশের পক্ষে নয় বরং ভারতে স্বার্থে কাজ করছে। বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা দুর্বল করা হয়েছে। টিপাইবাঁধ দিয়ে সিলেটকে মরুভূমিতে পরিণত করার চক্রান্ত চললেও সরকার নীরব। আইন শৃক্মখলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ক্রমেই দেশের সাধারণ জনগণের জন্য নাভিশ্বাস করে তুলেছে। তিনি জামায়াত নেতৃবৃন্দের ওপর সরকারের অগণতান্ত্রিক ও মানবতা বিরোধী আচরণ সম্পর্কে বলেন, জামায়াত কোন ধরনের দুর্বলতা নিয়ে এদেশে রাজনীতি করে না। দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে জামায়াত কখনো অগণতান্ত্রিক ছিল না। জামায়াতের সাথে আজ লাখ লাখ লোক সম্পৃক্ত রয়েছে যারা এদেশের ভিতরে ও বাইরে দেশের কল্যাণে, দেশ গড়ার জন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এতদসত্ত্বেও যদি সরকার তার আগ্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যায় তাহলে সরকারকে চরম খেসারত দিতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা হাবীবুর রহমান বলেন ইসলামী আন্দোলনকে জেল-যুলুম দিয়ে স্তব্ধ করা যায় না। ইসলামী আন্দোলনের ওপর যত যুলুম আসবে আন্দোলন ততই বেগবান হবে। তিনি সবাইকে বলিষ্ঠতার সহিত দ্বীনের দাওয়াত উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছানোর আহবান জানান।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নায়েবে আমীর আব্দুল গফফার বাবুল, সহকারী সেক্রেটারি খায়রুল আফিয়ান চৌধুরী, নাজমুল ইসলাম, কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা নাজীর হোসাইন, মাওলানা ছানাওর আলী, জালালপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাওলানা সোলাইমান হোসাইন, রেহান আহমদ হারিছ, নেছার আহমদ, বদরুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম, কামরুজ্জামান ফয়সল, বুরহান উদ্দিন, নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

ভীমরুলের চাকে ঢিল পড়েছে ঃ হরতাল নিয়ে সাজেদা ও সাহারার প্রলাপোক্তি

শেখ হাসিনা কর্তৃক ক্ষমতা দখলের সাড়ে ১৬ মাস পর বিএনপি সর্বপ্রথম একটি হরতাল ডেকেছে। আর সেই হরতালটি যেদিন পালিত হওয়ার কথা সেদিন হবে ১৭ মাস ২০ দিন পর। অর্থাৎ প্রায় ১৮ মাস বা দেড় বছর পর। ক্ষমতা দখলের দেড় বছর পর বিএনপি হরতাল ডেকেছে, আর তাতেই মাথা খারাপ হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের। প্রলাপোক্তি করেছেন শেখ হাসিনার অবর্তমানে আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সভানেত্রী এবং জাতীয় সংসদে সরকারী দলের ডেপুটি লিডার বেগম সাজেদা চৌধুরী। সরকারী এবং দলীয় উভয় হায়ারার্কিতে অর্থাৎ শীর্ষ নেতৃত্বের ক্রম বিন্যাসে বেগম সাজেদা চৌধুরী ২য় স্থানে। হরতালকে কেন্দ্র করে তিনি যা বলেছেন সেটি শুনে এবং পত্রিকার পাতায় পড়ে একদিকে যেমন হতভম্ব হতে হয়, অন্যদিকে তেমনি আওয়ামী নেতৃত্বের প্রতি করুণা হয়। ইন্টেলেকচুয়ালি দলটি কি এতই দেউলিয়া হয়ে পড়েছে? তা না হলে বেগম সাজেদা চৌধুরী কিভাবে আবিষ্কার করলেন যে, পাকিস্তান থেকে নাকি বেগম জিয়ার কাছে টাকা এসেছে? পাকিস্তান থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে নাকি এই মর্মে ধমক দেয়া হয়েছে যে, উনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিবাদ করছেন না কেন? পাকিস্তানের ধমক খেয়ে এবং টাকা খেয়েই নাকি খালেদা জিয়া এই হরতাল ডেকেছেন।
আওয়ামী লীগের কপাল ভালো যে, বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলে না। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় যে, ‘যে দেবতা যে ফুলে তুষ্ট হয়, সেই দেবতাকে সেই ফুলই দিতে হয়।'
বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী শালীন এবং ভদ্র। তাই তারা এখন পর্যন্ত (গত শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত) এ প্রশ্ন করেনি যে, আমরা তো দেড় বছর পর হরতাল করছি। আমরা ক্ষমতা গ্রহণ করার পর আপনারা তো মাত্র ৫২ দিনের মাথায় হরতাল ডেকেছিলেন। তাহলে আপনারা তখন কার টাকা খেয়ে হরতাল ডেকেছিলেন? আপনারা তখন কার ধমক খেয়ে সেই হরতাল ডেকেছিলেন? দুষ্ট লোকে বলে, সেদিন আপনাদেরকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র' টাকা দিয়েছিলো। সেই টাকা খেয়ে আপনারা হরতাল ডেকেছিলেন। আপনাদেরকে ধমক দিয়েছিলো ভারত সরকার। সেই ধমক খেয়ে আপনারা হরতাল করেছিলেন। বেগম জিয়া হরতাল ঘোষণার সময় এটাও ঘোষণা করেছেন যে, ‘এই হরতাল হচ্ছে সরকারের জন্য একটি সতর্ক সংকেত।' হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা এবং হরতাল পালন অর্থাৎ মাঝখানে ৩৯ দিনের গ্যাপ রেখে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশের ৬০ বছরে কেউ হরতাল ডাকেনি। এটি একটি বিরল ঘটনা এবং রাজপথ আন্দোলনে একটি আদর্শ নজীর। সাজেদা চৌধুরীর এই ধরণের বল্গাহীন মন্তব্য শুনে সাধারণ মানুষকে অনেক কথা বলতে শুনেছি। তারা বলছেন যে, বিএনপি দেড় বছরে একটি হরতাল ডেকেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিএনপির প্রথম দেড় বছরে একটি নয় দু'টি নয়, একেবারে ১৬টি হরতাল ডেকেছিলো। প্রতিটি হরতাল ডাকার পেছনে ভারত সরকার এবং তাদের গোয়েন্দা সংস্থা র' থেকে কত টাকা এসেছিলো? প্রতিটি হরতাল ডাকার পেছনে ভারত সরকার তৎকালীন আওয়ামী নেতৃত্বকে যদি মাত্র একবার করেও ধমক দিয়ে থাকে, তাহলেও তো আওয়ামী লীগকে ১৬ বার ধমক দিয়েছিলো। আমরা বুঝতে পারিনা যে, কাঁচের ঘরে বাস করে আওয়ামী লীগ অন্যের ইটের দালানে ঢিল মারে কিভাবে? এখন বিরোধী দল যদি আওয়ামী লীগের এই কাঁচের ঘরে পাল্টা ঢিল ছোঁড়ে তাহলে অবস্থাটি কি দাঁড়াবে?
আফসোস হয়, যখন দেখি যে, আওয়ামী ঘরানার তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এই হরতালের বিরুদ্ধে আওয়ামী সরকার এবং তাদের অনুগত বুদ্ধিজীবীরা ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার চেষ্টা করছেন। একটি টেলিভিশনের পরীক্ষামূলক সম্প্রচার এই সরকার বন্ধ করেছে। সেটির নাম ‘যমুনা টেলিভিশন।' আরেকটি চালু ও জনপ্রিয় চ্যানেলের কণ্ঠরোধ করেছে আওয়ামী সরকার। সেটির নাম ‘চ্যানেল ওয়ান।' অলিখিত চাপ প্রয়োগ করে ‘পয়েন্ট অব অর্ডার' নামক বাংলাভিশনের জনপ্রিয় টকশোটি বন্ধ করে দিয়েছে। আরেকটি টেলিভিশন চ্যানেলের দুইটি টকশো গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে আরো ১০ টি নতুন চ্যানেলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। যাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়েছে তারা সকলেই আওয়ামী লীগের পাঁড় সমর্থক। এভাবে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে বলপূর্বক কুক্ষিগত করে তারা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সরকারের স্বপক্ষে ফ্রি স্টাইল প্রচারণা চালাচ্ছে। গত দুই তিন দিন ধরে দেখছি, অনুগত টিভি চ্যানেলগুলোতে বিএনপি আহূত হরতালের বিরুদ্ধে অনবরত প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
দুই
আওয়ামী লীগের পোষা বুদ্ধিজীবীরা বলছেন যে, এই সরকারের বয়স সবেমাত্র ১৬ মাস। মাত্র ১৬ মাসের মাথায় হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হলো কেন? অন্যেরা বলছেন যে, দেশে এমন কোন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেনি, যার ফলে হরতাল দিতে হবে। যারা জেগে জেগে ঘুমায় তাদের ঘুম ভাঙানোর সাধ্য কার? জ্ঞানপাপীদেরকে জ্ঞান দেয়ার মতো মহাজ্ঞানী কেউ নেই। তা না হলে জোট সরকার যখন ক্ষমতায় ছিলো, তখন ১ মাস ২২ দিনের মাথায় হরতাল দেয়াকে ওরা জাস্টিফাই করেন কিভাবে? দেড় বছর বয়সী সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল দিলে যদি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় তাহলে দেড় মাস বয়সী সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল দিলে, সেই একই মহাভারত শুদ্ধ হয় কিভাবে?
ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান এবং ড. বদরুদ্দীন উমর ঠিকই বলেছেন যে, এই হরতাল দেয়া শুধুমাত্র যুক্তিযুক্তই নয়, বরং এই হরতালটি অনেক আগেই বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা উচিৎ ছিলো। এক্ষেত্রে বিএনপি এবং জামায়াত বরং অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। কলমের এক খোঁচায় শেখ হাসিনা ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দিলেন। কলমের আরেক খোঁচায় তিনি ভারতকে মংলা বন্দর দিয়ে দিলেন। কলমের আরেক খোঁচায় তিনি ভারতকে ট্রানজিটের মতো ভয়ংকর স্পর্শকাতর রাস্তাগুলোও ভারতকে ভাড়ায় দিয়ে দিলেন। যেসব চুক্তি হলো সেই চুক্তির বিস্তারিত বিবরণ সমগ্র জাতির সামনে তো দূরের কথা, তার আস্থাভাজন জাতীয় সংসদেও উপস্থাপন করা হয়নি। এর আগে তো বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন যে, দিল্লি সফরে যাওয়ার আগে ভারতের সাথে যেসব এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে, সেগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের সাথে আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সেই আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রতিবাদ তো অনেক করা হয়েছে, কিন্তু শেখ হাসিনা কোন প্রতিবাদে কোন রকম কর্ণপাত করেননি। এখন বিরোধী দলসমূহের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এই অবস্থায় হরতাল না ডাকলে তো আর সরকারের কানে বাতাস যাচ্ছে না। তাই এই হরতাল শুধু প্রয়োজনই নয়, বরং বিলম্ব হলেও এই হরতাল ছিলো একটি অপরিহার্য বিষয়। আওয়ামী লীগের বদৌলতে দেশের সর্বত্রই জাতীয় সংহতি বিপন্ন হতে চলেছে।
শুধুমাত্র ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপত্তার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডো আনা হয়েছে বলে চারদিকে শোনা যাচ্ছে। এরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর লোক কি না সেটি কনফার্ম করা যায়নি। তবে তারা যে ভারতের সিকিউরিটি ফোর্সের লোক সেটি ইতোমধ্যেই জানা গেছে। এই নিয়ে প্রতিবাদ হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল বিরোধী দল প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা ঐসব প্রতিবাদকে কোন পাত্তাই দেননি। এখন আবার ভারতীয় বিমানের নিরাপত্তার নাম করে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর স্কাই মার্শাল আনার পাঁয়তারা চলছে। গত ১৮ তারিখে স্কাই মার্শাল আমদানি সংক্রান্ত একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো সচিবালয়ে। ভারতীয় ডেলিগেশন অনিবার্য কারণ বশতঃ আসতে পারেনি বলে সেই বৈঠক হয়নি। তবে এ মাসের মধ্যেই এই ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে চূড়ান্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে বলে একাধিক পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। ভারতীয় দূতাবাসের মতো অন্যান্য দূতাবাসও যদি তাদের নিরাপত্তার জন্য তাদের দেশ থেকে সিকিউরিটি ফোর্স আনতে চায়, তাহলে বাংলাদেশ বাধা দেবে কিভাবে? ভারতের ক্ষেত্রে এক নিয়ম আর অন্য দেশের ক্ষেত্রে আরেক নিয়ম তো হতে পারে না। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৃথিবীর বহু দেশের বিমান ওঠা-নামা করে। এখন বিমান হাইজ্যাকিংয়ের ভয়ে যদি সব দেশই তাদের বিমান বাহিনী থেকে স্কাই মার্শাল এনে মোতায়েন করে তাহলে অবস্থাটা কি দাঁড়াবে? সেক্ষেত্রে বিদেশী সৈন্যে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ ছেয়ে যাবে।
এগুলো জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের চরম লংঘন। দেশের স্বাধীনতা বিপন্নকারী এমন সব ভয়াবহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। জনমতেরও কোন তোয়াক্কা করছে না। যে জাতীয় সংসদে তাদের রয়েছে চার পঞ্চমাংশ মেজোরিটি, সেই জাতীয় সংসদকেও তারা আস্থায় নিতে পারছে না। সে জন্যেই তো সেই পুরনো সংশয়টিই জোরদার হয় যে, তাহলে কি শেখ হাসিনা বিগত ভারত সফরের সময় ভারত সরকারের সাথে কোন গোপন চুক্তি সই করে এসেছেন?
তিন
ইন্ডিয়ার প্লেন এবং ইন্ডিয়ার দূতাবাসের জন্য যদি ভারত থেকে সেনা আমদানি করতে হয় তাহলে ভারতকে ট্রানজিট দিলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
শত শত মাইল রাস্তা দিয়ে ভারতীয় ভারী যানবাহন চলাচল করবে। ঐসব রাস্তা নির্মাণ ও মেরামতের জন্য ভারত থেকে এক বিলিয়ন ডলার বা ৭ হাজার কোটি টাকা দেয়া হবে। ঐসব ভারতীয় যানবাহনের উপর যদি ভারত বিরোধী বৈরি কোন শক্তি (হতে পারে সেটি উলফা, অথবা হতে পারে সেটি অন্য কোন শক্তি) ঐসব ট্রাক বা লরির উপর হামলা চালায়, তাহলে তো ভারত ঐ শত শত মাইল রাস্তা পাহারা দেয়ার জন্য হাজার হাজার ভারতীয় সৈন্য মোতায়েন করার দাবি জানাবে। স্কাই মার্শাল বা দূতাবাসে ইন্ডিয়ান সিকিউরিটি ফোর্স মোতায়েনের বিরুদ্ধে বেগম জিয়াসহ অনেকেই প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু ঐসব প্রতিবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের কর্ণ কুহরে প্রবেশ করেনি। তাহলে হরতাল ছাড়া জনগণের এসব প্রতিবাদের আওয়াজ তাদের কর্ণ কুহরে প্রবিষ্ট করানোর মতো আর কোন পথ কি তারা খোলা রেখেছেন?
এধরণের অসংখ্য দাবি আছে। একটি কলামে সব কথা বলা সম্ভব নয়। দাবিগুলো সংক্ষিপ্ত করলে সেগুলোর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭টি। এই ২৭টি দাবি পরিক্ষা করে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং তাদের পোষা বুদ্ধিজীবীরা বলুন যে এসব দাবির একটিও কি অসংগত? বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, সামনে আছে এখনো ৩৪ দিন। এর মধ্যে যদি সরকার এসব দাবি মেনে নেয়, তাহলে তো হরতালের আর কোন প্রয়োজন হয় না। কিন্তু দাবি না মানলে কি হবে?
তারা যে দাবি মানবে না, সেকথা তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ইতোমধ্যেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি তো কোন রূপ রাখ-ঢাক না করে বলেছেন যে, এই হরতাল নাকি কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এখন আওয়ামী পন্ডিতরা বলুন যে হরতাল তো একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। সেই গণতান্ত্রিক অধিকারও কেন কঠোর হস্তে দমন করা হবে?
আগেই বলেছি যে, জোট সরকারের প্রথম ১৮ মাসে আওয়ামী লীগ ১৬টি হরতাল ডেকেছিলো। কিন্তু তৎকালীন সরকার তো হরতাল দমন করার কোন চেষ্টা নেয়নি। আর নেবেই বা কেন? মিছিল-মিটিং, সভা-সমিতির মতো হরতালও তো প্রতিবাদের এক ধরণের ভাষা ও মাধ্যম। আমরা জানি না, ‘কঠোর হস্তে দমন' শব্দ কয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের মুদ্রাদোষ কি না? কারণ পানির দাবিতে মিছিল করলেও তিনি কঠোর হস্তে দমনের কথা বলেন। বিদুৎ পাওয়ার আওয়াজ তুললেও তিনি কঠোর হস্তে দমনের কথা বলেন। সভা-সমিতিতে মিছিল করে আসার পথে বিরোধী দলের মিছিল বা গাড়ি বহরে হামলা করে মানুষ হত্যা করা হয়। নাটোরের সিংড়ায় বগুড়ার জাকির হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে। ১৯ তারিখের মহাসমাবেশে যোগদান করতে আসা বিএনপির এক কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করে তার লাশ বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হয়েছে। এখন আবার হরতাল কঠোর হস্তে দমনের হুংকার দেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী সরকার কোথায় নিয়ে যাচ্ছে দেশকে? সরকার বিরোধীতা বা প্রতিবাদের গণতান্ত্রিক পথগুলোকে যদি একের পর এক রুদ্ধ করা হয়, তাহলে কোন পথে যাবে মানুষ? প্রতিবাদ না করে তারা কি সব ঘরে বসে থাকবে? নাকি প্রতিবাদ করার জন্য এমন পথ খুঁজে বের করবে যে পথ গণতান্ত্রিক নাও হতে পারে। তেমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার জন্য দায়ী কে হবে? অবশ্যই বিরোধী দল এবং জনগণ নয়। তার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ বর্তাবে আওয়ামী সরকারের ঘাড়ে।

  © Free Blogger Templates 'Greenery' by Ourblogtemplates.com 2008

Back to TOP